Ads Right Header

Buy template blogger

গাছের শিকড়ের অনুকরণে অভিনব রোবট

গাছের শিকড় মাটির নীচে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তা আমরা দেখতে পাই না৷ কিন্তু সেই ক্ষমতা অনুকরণ করে বিজ্ঞানীরা অভিনব রোবট তৈরি করেছেন৷ মহাকাশ অভিযান থেকে অস্ত্রোপচার – নানা ক্ষেত্রে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করা যেতে পারে৷

বিজ্ঞানীরা এমন রোবট তৈরি করছেন, যেগুলি গাছের শিকড়ের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া নকল করতে পারে৷ নানা ক্ষেত্রে এই ক্ষমতার প্রয়োগ সম্ভব৷ শিকড়ের মতো রোবট তৈরি করার আগে গবেষকদলকে মাটির নীচে আসল শিকড়ের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছিল৷ কিন্তু সেই কাজ মোটেই সহজ ছিল না৷ জীববিজ্ঞানী বারবারা মাজোলাই বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘গাছের শিকড় অত্যন্ত জটিল পরিবেশে বেড়ে ওঠে৷ মাটির গভীরে বেড়ে উঠতে তাদের অনেক চাপ সৃষ্টি করতে হয়৷ তাছাড়া শুধু অসমোসিস বা শিকড়ের অগ্রভাগেই শিকড় বেড়ে ওঠে৷ প্রথমে মাটি থেকে পানি ও অন্যান্য উপাদান শুষে নিয়ে এবং তারপর কিছু অংশ ও মৃত কোষ বর্জন করে শিকড় নিজের আকার-আয়তন বাড়িয়ে নেয়৷ একইসঙ্গে তারা এক ধরনের আধা তরল পদার্থ সৃষ্টি করে, যার সাহায্যে শিকড় বেড়ে উঠতে এবং মাটির মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷'' 

এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বিজ্ঞানীদের সবার আগে রোবটকে মাটি খুঁড়ে গভীরে প্রবেশ করানোর পদ্ধতি সৃষ্টি করতে হয়েছিল৷ খোঁড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোবটকে নিজের জন্য জায়গাও করে নিতে হয়েছে৷ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আলি সাদেগি বলেন, ‘‘নতুন উপাদান যোগ করে প্রকৃতিতে বৃদ্ধি ঘটে৷ সেই প্রক্রিয়া অনুকরণ করে আমরাও ‘গ্রোয়িং সিস্টেম' নামের প্রণালী গড়ে তুলেছি৷ রোবটের মধ্যে কৃত্রিম ফিলামেন্ট বা আঁশ ঢুকিয়ে দেই৷ রোবট তখন নিজেই একটি কাঠামো তৈরি করে মাটি খুঁড়ে প্রবেশ করে৷ নিজেই শরীর গঠন করে, সেই শরীর দীর্ঘায়িত করে মাটি ফুঁড়ে এগোতে পারে৷''রোবটের শিকড় স্বাভাবিক শিকড়ের মতোই উদ্দীপনায় সাড়া দেয়৷ বাধা পেলে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়৷ একই সঙ্গে সেই শিকড় পুষ্টি ও পানির খোঁজ করে৷ বারবারা মাজোলাই বলেন, ‘‘শিকড়ের এই আঁকাবাঁকা গতিপথ আমরা দুভাবে অনুকরণ করছি৷ প্রথমত, আমরা ইলেকট্রো-বায়োলজিক্যাল তরল ব্যবহার করছি৷ তার উপর কী ধরনের ইলেকট্রিক চার্জ প্রয়োগ করা হয়, সেই অনুযায়ী ঘনত্বের হেরফের ঘটে৷ সেইসঙ্গে রোবটের পাশের দিকে কৃত্রিম উপাদান যোগ করে তার শরীর বাঁকাতে পারি৷''মাটির মধ্য দিয়ে চলার সময় দৃষ্টিশক্তি ও অনুভূতি সম্ভব করতে রোবটের মধ্যে নরম অথচ মজবুত উপকরণ দিয়ে উন্নত সেন্সর বসানো রয়েছে৷ ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার লুচিয়া বেকাই বলেন, ‘‘এইসব সেন্সর আশেপাশের পরিবেশ ও বস্তু সম্পর্কে তথ্য বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখে৷ স্পর্শ করলে সেন্সর তা টের পায়৷ তাদের সামনে যে কোনো শক্তির চাপ তারা বুঝতে পারে৷''
এই রোবোটিক শিকড় মহাকাশ অভিযানে অথবা মাটির নীচে পুষ্টি, তেল ও মাইন শনাক্ত করার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তির আরো সাহসি প্রয়োগ করতে চান৷ ভবিষ্যতে এমনকি মস্তিষ্ক অপারেশনের সময় এমন নমনীয় রোবট ব্যবহার করা হতে পারে, যা নিজের আকার পরিবর্তন করতে পারে৷ এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার এডোয়ার্ডো সিনিবাল্ডি বলেন,‘‘অস্ত্রোপচারের জন্য ছোট আকারের, নমনীয়, আকার বদলাতে সক্ষম – এমন সরঞ্জাম তৈরি করা বড় চ্যালেঞ্জ৷ সমস্যা হলো, ছোট আকারের অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম কিছু ধরনের অপারেশনের জন্য কম কার্যকর ও নিখুঁত না-ও হতে পারে৷ তাই ভবিষ্যতে এমন এক সরঞ্জাম তৈরি করতে হবে, যা একইসঙ্গে নমনীয় ও মজবুত হবে৷''
Previous article
Next article

Leave Comments

Post a Comment

Ads Atas Artikel

Ads Tengah Artikel 1

Ads Tengah Artikel 2

Ads Bawah Artikel